স্বদেশ ডেস্ক: আদালত কক্ষে আসামি হাজির করার প্রয়োজন হবে না। উপস্থিত হতে হবে না আইনজীবী বা সাক্ষীকেও। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চলবে বিচারকাজ। কারাগারে থেকে আসামি এবং কর্মস্থলে বসে চিকিৎসক, পুলিশসহ বিশেষজ্ঞ সাক্ষীরা যে কোনো মামলায় সাক্ষ্য দিতে পারবেন। এমনকি বিদেশে থাকা ব্যক্তিও এ প্রক্রিয়ায় দেশের আদালতে ‘হাজির’ হতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজ এমন সহজ করার আইনি কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ‘সাক্ষ্য ও বিচার কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আইন-২০১৯’ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন কমিশন। এটি চূড়ান্ত করে চলতি বছরই সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাক্ষ্য ও বিচার কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আইনের খসড়া আইন কমিশন আমাদেরও পাঠিয়েছে। আমরা এখন সাক্ষ্য আইনটি নতুন করে করছি। এ কারণে চিন্তা করছি, বিচারকাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি সাক্ষ্য আইনে ঢুকিয়ে দেব, নাকি আলাদা করে করব। বিষয়টি নিয়ে দু-একবার আমরা বসেছি। আরও বসতে হবে।
জানতে চাইলে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা (জেলা ও দায়রা জজ) ফউজুল আজিম আমাদের সময়কে বলেন, আইনটি তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর পর জেলখানা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ডিসি অফিস, থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভিজিট করেছি। ডাক্তার, আইনজীবী, বিচারক, পুলিশ, কারা কর্মকর্তাসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এখন যে দেশে এ ধরনের পদ্ধতি চালু রয়েছে, সেই দেশ কমিশন ভিজিট করবে। এর পর আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই খসড়াটি চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘আদালত কক্ষ হইতে দূরবর্তী কোনো স্থানে অবস্থানরত মোকদ্দমার কোনো পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং মোকদ্দমার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিও-ভিজ্যুয়াল সংযোগের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’ এতে ‘ইলেকট্রনিক রেকর্ড’র সংজ্ঞা দিয়ে বলা হয়, কোনো তথ্য, উপাত্ত, বার্তা, কোনো ঘটনার ধারণকৃত ভিডিওচিত্র, টেলিফোন বা মোবাইল ফোনের কোনো অ্যাপসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো মাধ্যমে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড, যা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাস, কম্পিউটারে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংরক্ষিত, গৃহীত বা প্রেরিত তথ্য কোনো দেওয়ানি-ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রমে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোনো মামলার পক্ষ, অভিযুক্ত ব্যক্তি, সাক্ষী বা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ অর্থাৎ ‘দৃশ্যমান উপস্থিতি’ তার ‘শারীরিক উপস্থিতি’ হিসেবে গণ্য হবে। বিদেশে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য হবে।
আদালত মামলা সংশ্লিষ্ট কারও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে তার সাক্ষ্য বা বক্তব্য গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে আবেদন করতে হবে এবং দরখাস্তে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র, টেলিফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। হাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ বা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। আদালতও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এভাবে সাক্ষ্যগ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন।
২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে প্রিজনভ্যান থেকে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তার সঙ্গীরা। এর পরই জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের কারাগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এ ছাড়া বেশিরভাগ মামলায় বিশেষজ্ঞ সাক্ষী যেমন, পুলিশ, চিকিৎসকসহ সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসের কাজ ফেলে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে ছুটে বেড়াতে হয়। এ জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের পেছনে টিএ-ডিএ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থও গুনতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কয়েকবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার তাগিদ দিয়েছেন।